সেল ইঞ্জুরি
সেল ইঞ্জুরি হল বিভিন্ন ধরনের চাপের পরিবর্তন যা বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে একটি কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।যা কোষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। সাধারণত কোষের মৃত্যু ঘটে 2 প্রক্রিয়ায়। অ্যাপোপটোসিস ও নেক্রসিস। অ্যাপোপটোসিস হল প্রোগ্রামড সেল ডেথের একটি রূপ যা বহুকোষী জীবের মধ্যে ঘটে। বিভিন্ন বায়োকেমিক্যাল পদার্থগুলোর পরিবর্তনের ফলে কোষের পরিবর্তন ও মৃত্যু হতে পারে।এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে ব্লেবিং, কোষ সংকোচন, নিউক্লিয়ার ফ্র্যাগমেন্টেশন, ক্রোমাটিন ঘনীভবন, ডিএনএ ফ্র্যাগমেন্টেশন এবং এমআরএনএ ক্ষয়।
অন্যদিকে নেক্রোসিস হল রোগ বা আঘাতের ফলে উদ্ভিদ বা প্রাণীর টিস্যুর একটি সীমাবদ্ধ এলাকার মৃত্যু । এটি অকাল টিস্যু মৃত্যুর একটি কারণ, সতস্ফুর্ত প্রাকৃতিক মৃত্যুর বিপরীত হলো নেক্রসিস। এটি শারীরিক এবং জৈবিক উভয় প্রকারের আঘাতের কারণে হতে পারে।শারীরিক আঘাতের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে কাটা, পোড়া , ক্ষত, অক্সিজেনের অভাব (অ্যানক্সিয়া) এবং হাইপারথার্মিয়া। জৈবিক আঘাতের মধ্যে ইমিউনোলজিকাল আক্রমণ এবং রোগ সৃষ্টিকারী এজেন্টের প্রভাব ।
আঘাতের অন্যতম সাধারণ কারণ অক্সিজেনের ঘাটতি বা হাইপোক্সিয়া; প্রকৃতপক্ষে, এটিই কোষের আঘাতের সবচেয়ে বড় কারণ।আমাদের কার্ডিয়াক বা শ্বাসযন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ না করলে রক্তে অক্সিজেনের অপর্যাপ্ততা দেখা দেয় একে হাইপোক্সিয়া বলে। অর্থাৎ আমাদের লোহিত রক্তকণিকা সঠিকভাবে অক্সিজেন সমস্ত কোষে পরিবাহিত করতে পারেনা। যার ফলে কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে।তখন অক্সিজেনের ঘাটতি জনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। যেমন অ্যানিমিয়া বা কার্বন মনোক্সাইড [CO] টক্সিকোসিস
শারীরিক এজেন
কোষের আঘাতের শারীরিক ফাক্টরস গুলোর মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক আঘাত, অতি তাপমাত্রা, বিকিরণ এবং বৈদ্যুতিক শক। ট্রমা সরাসরি কোষের ক্ষতি করতে পারে (উদা, পিষে বা ছিঁড়ে যাওয়া), বা পরোক্ষভাবে কোষ এবং টিস্যুতে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত করে। অত্যাধিক কম তাপমাত্রা রক্তনালীগুলিকে ক্ষতি করতে পারে এবং কিছু সেলুলার প্রতিক্রিকেয়া ত্বরান্বিত করতে পারে, অথবা তাপমাত্রা-সংবেদনশীল এনজাইমগুলির কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। অন্যদিকে অত্যাধিক তাপ এনজাইম এবং অন্যান্য প্রোটিনকে বিকৃত করে।ফলে কোষ ইঞ্জুরি দেখা দেয়।
সেল ইঞ্জুরি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বিকিরণ।
আয়নাইজিং এবং অতিবেগুনী বিকিরণ হল বিকিরণের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ যা সেলুলার ইঞ্জুরির তৈরি করে। বিকিরণ, অতিবেগুনী রেঞ্জের উপরের ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে, পরমাণু বা অণুগুলিকে আয়নিত করে, যা তখন সরাসরি কোষের ঝিল্লি বা অর্গানের ক্ষতি করে ।বিশেষ করে ডিএনএ -এর সাথে বিক্রিয়া করে ফ্রিরেডিকেল তৈরি করে। আর ফ্রিরেডিকেল দেহকোষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর যা কোষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।
স্বাভাবিক কোষে, সোডিয়াম -পটাসিয়াম অ্যাডিনোসিন ট্রাইফোসফেটেস (Na + /K + -ATPases) আয়নিক পাম্প হিসাবে কাজ করে, বিশেষ করে, কোষের ঝিল্লি জুড়ে ক্যাশনেরপটেনশিয়াল বহনকারী হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি কোষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন এ টি পি । অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন এর মাধ্যমে এই এটিপি তৈরি করে মাইটোকনড্রিয়া। আর এই প্রক্রিয়া চলার জন্য কোষের ভেতর থেকে তিনটি সোডিয়াম আয়ন বাইরে বেরিয়ে যাবে এবং দুটি পটাশিয়াম আয়ন ভেতরে প্রবেশ করে।যার ফলে একটি আয়ন পটেনশিয়াল এটি তৈরি হয়। কিন্তু ঈশ্চেমিয়া এর ফলে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ সোডিয়াম পটাশিয়াম পাম্প ঠিকমতো কাজ করে না।ফলে কোষের ভেতরে ক্যালসিয়াম সোডিয়াম পটাশিয়াম এবং H2O এর পরিমাণ বেড়ে যায়।যার ফলে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এর ঝিল্লি ফেটে যায়। এবং কোষের মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে ATP র পরিমাণ কমে গেলে হয় কোষকে অ্যানেরোবিক মেটাবলিজম অবস্থায় যেতে হবে বা মারা যেতে হবে। অ্যানেরোবিক মেটাবলিজম হল গ্লাইকোলাইসিস বা গ্লুকোজের ভেঙে যাওয়া।
ফলে দুই ধরনের সেল ইঞ্জুরি হতে পারে।
সরাসরি বিষক্রিয়া: সরাসরি আণবিক উপাদান বা সেলুলার অর্গানেলের সাথে মিলিত হয়ে কোষের নেক্রসিস ঘটায় তাকে সরাসরি বিষক্রিয়া বলে।
উদাহরণস্বরূপ, মার্কারিক ক্লোরাইড বিষক্রিয়ায় (দূষিত সামুদ্রিক খাবার হিসাবে)
সুপ্ত বিষক্রিয়া:এক্ষেত্রে কোষ সরাসরি টক্সিনের সংস্পর্শে আসে না কিন্তু টক্সিনে পরিবর্তিত হয়ে কোষের ক্ষতি সাধন করে। প্রোটিন মিসফোল্ডিংয়ের কারণেও কোষের নেক্রসিস হতে পারে।সাধারণত এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম প্রোটিন সিনথেসিস করে কিন্তু যদি এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামে একটি মিস ফোল্ডিং প্রোটিন যুক্ত হয় তবে সেটা কোষের নেক্রসিস ঘটায়।
Comments
Post a Comment
Thanks