সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর :
- Get link
- X
- Other Apps
রাষ্ট্রের উন্নতি নাগরিকের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুনাগরিক দেশের জন্য হবে সম্পদ। আর তা না হলে দেশের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে। দেশের প্রগতি ও ব্যর্থতা উভয়ই নির্ভর করে নাগরিকের সততা, দক্ষতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপর । এজন্য নাগরিকদের হতে হবে সুনাগরিক।
বাংলাদেশ সরকার নাগরিকের পরিচয়, দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদান করেছে। আশা করা যায়, নাগরিকের পরিচয় নির্ণয় ও প্রশাসনিক কাজে শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমান অধ্যায়ে সুনাগরিকের প্রয়োজনীয় গুণাবলি, এর প্রতিবন্ধকতা, গুরুত্ব ইত্যাদি দিক সম্পর্কে আমরা জানব।
সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সামিহা : লাজিন, কিছু দিন আগে পত্রিকায় রিকশাওয়ালার খবরটি পড়েছিস?
লাজিন : হ্যাঁ পড়েছি। তার রিকশায় পড়ে থাকা একজন যাত্রীর এক লক্ষ টাকার একটি ব্যাগ পেয়েও নেয়নি। বরং যাত্রীর ঠিকানা খুঁজে বের করে পুরো টাকাটা যাত্রীকে ফেরত দেয়।
সামিহা : ঐ রিকশাওয়ালার মতো মানুষই আমাদের দেশের জন্য দরকার। সত্যিই রিকশাওয়ালার বিচক্ষণতা ও সচেতনতা প্রশংসার দাবীদার।
ক. জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে কততম দেশ?
খ. সাম্প্রদায়িকতা সুনাগরিকত্ব অর্জনের একটি অন্তরায়—কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রিকশাওয়ালার মাঝে সুনাগরিকের কোন গুণটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সুনাগরিক হতে হলে রিকশাওয়ালার উক্ত গুণটিই যথেষ্ট”—তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম।
খ. সুনাগরিকত্ব অর্জনের জন্য দেশের সকল নাগরিককে উদার হতে হয়। সাম্প্রদায়িকতার ফলে দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক সময় বিভেদ ও অশান্তি বিরাজ করে। যেমন : বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর একাংশে নানা কারণে সহিংসতা দেখা দেয়। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এবং সমাজে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব হয়। তাই সুনাগরিকত্ব অর্জনে সাম্প্রদায়িকতা প্রধান অন্তরায় হিসাবে কাজ করে।
গ. উদ্দীপকে রিকশাওয়ালার মাঝে সুনাগরিকের যে গুণটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো আত্মসংযম। একজন সুনাগরিককে তিনটি মৌলিক গুণাবলি সম্পন্ন হতে হয় যার মধ্যে আত্মসংযম অন্যতম। একজন সুনাগরিককে অবশ্যই আত্মসংযমী হতে হয়। আত্মসংযমী মানুষ নিয়ম-কানুন মেনে চলে, লোভ-লালসা পরিহার করে, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করে এবং রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করে।
সমাজ ও দেশের কল্যাণে নিজের স্বার্থকে তুচ্ছ করে একজন সুনাগরিক কাজ করে যায়। একজন আত্মসংযমী নাগরিক বিভিন্ন অসৎ কাজ যেমন : দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বার্থপরতা ও পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি থেকে নিজেকে বিরত রেখে নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে। তেমনি উদ্দীপকের রিকশাওয়ালা এক লক্ষ টাকার ব্যাগ পেয়েও সে তার লোভ-লালসাকে পরিহার করে আত্মসংযমী হয়। এরপর সে টাকার ব্যাগটি প্রকৃত মালিককে ফেরত দিয়ে সুনাগরিকতা ও আত্মসংযমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সুনাগরিকের অন্যতম গুণ আত্মসংযমের প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. সুনাগরিক হতে হলে আত্মসংযম গুণটিই যথেষ্ট এ ব্যাপারে আমি একমত নই। একজন সুনাগরিকের তিনটি মৌলিক গুণ থাকে তার মধ্যে আত্মসংযম একটি। আত্মসংযম ছাড়াও সুনাগরিকের আরও দুইটি মৌলিক গুণ রয়েছে। যথা : বুদ্ধি ও বিবেক-বিচার। দেশের একজন বুদ্ধিমান নাগরিক দেশ পরিচালনার জন্য উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সফলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন বুদ্ধিমান নাগরিক রাষ্ট্রের ও সমাজের যেকোনো সমস্যার বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধানের প্রচেষ্টা চালায়। আবার একজন নাগরিককে শুধু বুদ্ধিমান ও আত্মসংযমী হলে চলবে না বরং কোন কাজ ভালো না মন্দ তা বিচারের ক্ষমতা থাকতে হবে এবং নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যের জ্ঞান থাকা জরুরি।
অর্থাৎ বিবেক-বিচার সুনাগরিকত্বের অন্যতম মৌলিক গুণাবলি। বিবেক হলো সুনাগরিকের জাগ্রত শক্তি। বিবেককে কাজে লাগিয়ে সে ভালো ও মন্দ কাজের ব্যবধান বুঝে এবং দেশের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়। উপর্যুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকে উল্লিখিত আত্মসংযম গুণটি সুনাগরিকতার জন্য যথেষ্ট নয়।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সোবহান সাহেব এবং শেখর বাবু দুই বন্ধু। সোবহান সাহেব একজন বড় সরকারি কর্মকর্তা। তিনি কিছুদিন পূর্বে নির্বাচনে একটি ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। শেখর বাবু একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। এ বছর তিনি শ্রেষ্ঠ করদাতার পুরস্কার পান। তাদের সন্তানদের লেখাপড়ায় উভয়েই অত্যন্ত সচেতন। সোবহান সাহেব ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে শেখর বাবুর পরিবারকে দাওয়াত করেন। শেখর বাবুও পূজা-পার্বণে সোবহান সাহেবের পরিবারকে তাঁর বাসায় নিয়ে আসেন। উভয় পরিবারই নিজেদের আচার-অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করে।
ক. রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কে?
খ. সুনাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে নির্লিপ্ততা একটি বাধা। কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের উভয় পরিবারই স্বাধীনভাবে নিজেদের আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নাগরিকের কোন অধিকারটি ভোগ করছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সোবহান সাহেব এবং শেখর বাবু অধিকার ভোগের পাশাপাশি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন”—পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বুদ্ধিমান নাগরিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
খ. কাজের প্রতি নাগরিকদের উদাসীনতাকে বলে নির্লিপ্ততা। নিরক্ষরতা, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, অলসতা, দারিদ্র্য ও কাজের অনীহার কারণে নির্লিপ্ততা তৈরি হয়। নির্লিপ্ততার ফলে নাগরিকগণ রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে চায় না। এমনকি নাগরিক হিসাবে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে না। তাই সুনাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে নির্লিপ্ততা একটি বাধা হিসেবে কাজ করে।
গ. উদ্দীপকে উভয় পরিবারে স্বাধীনভাবে নিজেদের আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নাগরিকের স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার অধিকার ভোগ করছে। বিশ্বের সব দেশের নাগরিকগণ রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের অধিকার ভোগ করে। দেশের নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য নাগরিকগণ সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করে। এরূপ অধিকারের মধ্যে প্রত্যেক নাগরিকগণ নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার ও স্বাধীনতা লাভ করবে। অন্য ধর্মের লোকদের তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে কোনো বাধা দিবে না।
নাগরিকগণের ধর্মীয় মতামত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। এক ধর্মের ধর্মীয় আচার পালন করতে গিয়ে অন্য ধর্মের লোকদের যেন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সর্বোপরি এক ধর্মের লোকেরা অন্য ধর্মের লোকদের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবে। উদ্দীপকে দেখা যায় সোবহান সাহেব ও শেখরবাবু তাদের নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে এবং একজন অপরজনকে তাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উভয় পরিবার নাগরিকের অন্যতম অধিকার স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করতে পারে।
ঘ. উদ্দীপকে সোবহান সাহেব ও শেখর বাবু নাগরিক অধিকার সমূহ ভোগের পাশাপাশি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নাগরিক অধিকার ছাড়া যেমন নাগরিকতার বিকাশ অসম্ভব তেমনি একটি রাষ্ট্র সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য নাগরিকদের রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের রাষ্ট্রের প্রতি অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা ও নিয়মিত কর প্রদান অন্যতম। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্দীপকের সোবহান সাহেবও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করে। অন্যদিকে শেখর বাবু একজন ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায় হতে প্রাপ্ত মুনাফার একটি অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কর হিসেবে জমা দেন। একটি দেশের উন্নয়নে জন্য কর রাজস্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা উদ্দীপকের শেখর বাবু প্রদানের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। আলোচনার মাধ্যমে বুঝা যায়, সোবহান সাহেব ও শেখরবাবু রাষ্ট্রকর্তৃক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি রাষ্ট্রের উন্নয়নে বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নাগরিক
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
দৌলতরামদি ইউনিয়নে প্রায় ৮০% লোক শিক্ষিত। উক্ত ইউনিয়নের নির্বাচনে নাগরিকগণ ‘ক’ ও ‘খ’ ব্যক্তির মধ্যে ‘ক’ ব্যক্তিকে সৎ ও যোগ্য বলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ‘ক’ ব্যক্তি তার এলাকার একটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার ভাইয়ের ছেলে প্রার্থী হলেও প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন।
ক. কোন ধরনের নাগরিক যেকোনো রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ?
খ. নাগরিকদের সুনাগরিক হতে হবে কেন? ব্যাখ্যা কর
গ. দৌলতরামদি ইউনিয়নের নাগরিকদের মধ্যে কোনটির প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর জনাব ‘ক’ একজন সুনাগরিক—মতামত দাও।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
দৃশ্যপট-১: জনাব ‘ক’ একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তিনি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বার্থপরতা এবং পক্ষপাতিত্ব থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
দৃশ্যপট-২: জনাব ‘খ’ যেকোনো কাজ করার আগে কাজটির ভালো-মন্দ যাচাই করে কাজটি সম্পন্ন করেন।
ক. বুদ্ধিমত্তা অর্জনের বড় উপায় কী?
খ. ‘দাম্ভিকতা সুনাগরিকতার অন্তরায়’—ব্যাখ্যা কর।
গ. দৃশ্যপট-১ এ সুনাগরিকের কোন গুণটি নির্দেশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যপট-২ পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment
Thanks